পেটে সন্তান বহন করা ভয়ানক কষ্টের কাজ ।এই সন্তান কে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য একেক মা কে একেক রকম কষ্ট করতে হয় ।এই কষ্ট যেন জটিল কোনো সমস্যা না হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিত ।এই সময়ে একজন মায়ের জন্য দরকার পরিবারের সব সদস্যদের বাড়তি মনোযোগ । বয়ে চলছে রমজান মাস ।অনেক মা রোজা রাখেন ।অনেকে আবার পারেন না । নানান রকম জটিলতার সৃষ্টি হয় । রোজা রাখার সময় মায়েরা খেয়াল রাখবেন যে সন্তান ঠিক মতো নড়াচড়া করছে কিনা, রক্তে চিনির পরিমাণ খুব বেশী কমলো কিনা । কারণ নিয়মিত রোজা রাখা অবস্থায় অনেক মায়েদের রক্ত,রক্তে চিনির পরিমাণ অতিরিক্ত কমে যায়, যা কখনোই কাম্য নয় ।
অনেক মা পেটে সন্তান থাকার সময় ভয়ানক acidity র সমস্যায় ভোগে। বুকের মধ্যে আলপিন এর মতো খোঁচানো pain হয়, পিঠেও pain হতে পারে ।এই ধরনের সমস্যায় যারা কষ্ট পান, তারা এফতারের পূর্বে acidity র ওষুধ খেলে উপকার পাবেন ।আবার অনেকের পেসাবে ইনফেকশন (Urin Infection ) হয় ।এই ধরনের সমস্যা হলে পেসাবে জালা পোড়া, তীব্র গন্ধ, pain হয় । অনেক এর কোমর থেকে থাই এর দিকেও pain হয় ।Pregnancy তে এই সমস্যা গুলো তীব্র হলে, অবশ্যই গাইনী চিকিৎসক (Gynaecologist )এর পরামর্শ নিন ।কারণ সমস্যা খুব বেশী হলে, antibiotic ওষুধ লাগতে পারে ।
ইনসুলিন নিতে হয়, এমন pregnant নারী দের রক্তে চিনির পরিমাণ খুব বেশী কমতে পারে । আবার তেলে ভাজা খাবার বেশী খাওয়ার জন্য, রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ অনেক বাড়তে পারে । তাই Diabetes আছে ,এমন মায়েদের খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর ইনসুলিন নিতে হলে,অনেক ভেবে চিন্তে নিতে হবে । এই ধরনের মায়েরা নিয়মিত blood sugar (রক্তের চিনির পরিমাণ) মাপবেন ।
যারা একই সাথে সন্তান বহন করছেন এবং চাকরীর জন্য পরিশ্রম করতে হচ্ছে, তারা রোজা রাখলে অবশ্যই সন্তানের নড়াচড়া খেয়াল রাখবেন । অনেক মা কে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেতে হয় ।চিকিৎসকের পরামর্শে সেসব ওষুধের সময় রোজার জন্য ,আলাদা সময়ে খেলে অসুবিধা হবে কিনা, সেটা অবশ্যই জেনে নিন ।এফতারের পরে এক থেকে দেড় লিটার পানি অবশ্যই খাবেন। সেহরী তে খাবার সাথে সাথে ঘুমাবেন না । কারণ এই সময়ে অনেক মায়েদের হজম শক্তি কমে যায় । আর হঠাৎ করে এতো সময় না খেয়ে থাকার জন্য অনেকের নানান রকম জটিলতার সৃষ্টি হয় ।
এফতারের পরে রাতের খাবারে ডাল, সুপ, অল্প মশলা দিয়ে তরকারি,তরকারির ঝোল খান। কাবাব, গরু খাসির মাংস, বোরহানি, রেজালা,এই ধরনের অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার বাদ দিবেন । রোজা থেকে হঠাৎ অতিরিক্ত ঘামছেন কিনা, পা হাত ও মুখ ফুলে ওঠা, বুকের মধ্যে ব্যাথা, চোখে দুটো দেখতে পাওয়া, এই ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন ।
আর এফতারের সময়েও তেলে ভাজা খাবার যতোটা সম্ভব বাদ দিয়ে দেন ।এই সময় এমনিতেই অনেক মায়েদের হজম শক্তি কমে যায় ।তাই বাহিরের খাবার বাদ দিয়ে দেন ।খুব দূর্বল লাগলে এফতারের সময় orsalaine খান।বাসায় orsalaine না থাকলে,চিনি লবণ ও পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খান।এতে পানি শূন্যতা ও দূরবলোতা কমবে ।
পেটের সন্তান চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দশ থেকে বারো বার নড়াচড়া করলে ( ঘুমানোর সময় টা বাদ দিয়ে ), বুঝবেন যে আপনার baby ভালো আছে ।
Pregnancy তে অধিকাংশ মা বিভিন্ন রকম জটিলতায় আক্রান্ত হয়।পরিবারের সবার সহযোগিতা পেলে, এই সমস্যা গুলো তেমন কোনো খারাপ প্রভাব ফেলবে না । যমজ সন্তান বহনকারী মায়েদের আরো বেশী মনোযোগী হতে হবে নিজের প্রতি ।কারণ যমজ সন্তান বহনকারী মায়েদের খাবার ও rest দরকার হয় অনেক গুণ বেশী পরিমাণে ।
সঠিকভাবে নিজের যত্ন ও পারিবারিক মনোযোগের জন্য আপনি হবেন সুস্থ সুন্দর মা।আর আপনার সন্তানও হবে সুস্থ সবল ।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ,
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল।